স্ট্রোকের যে লক্ষণগুলো অবহেলা করবেন না: সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন

স্ট্রোক এমন একটি শারীরিক সমস্যা যা হঠাৎ করেই ঘটতে পারে, এবং এটি অবহেলা করা জীবনের জন্য মারাত্মক হতে পারে। বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন, এবং অনেকেই এই সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে স্ট্রোকের কারণে দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অক্ষমতা এমনকি মৃত্যু হতে পারে। তাই স্ট্রোকের লক্ষণগুলো অবহেলা না করার গুরুত্ব অপরিসীম।

স্ট্রোক কী?

স্ট্রোক মূলত তখন ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় বা রক্তক্ষরণ হয়। মস্তিষ্কে অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যায়। স্ট্রোক দুই ধরনের হতে পারে:

  1. ইসকেমিক স্ট্রোক: এটি সবচেয়ে সাধারণ স্ট্রোক, যেখানে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়।
  2. হেমোরেজিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। এটি কম হলেও অনেক বেশি বিপজ্জনক।

স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ

স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো দ্রুত চিহ্নিত করা গেলে এর চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা সম্ভব। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো যা অবহেলা করা উচিত নয়:

  1. মুখের অংশে বা শরীরের একপাশে দুর্বলতা: মুখের একপাশ ঝুলে পড়া বা হাত বা পায়ের দুর্বলতা স্ট্রোকের একটি সাধারণ লক্ষণ। আপনি যদি মুখের একপাশ নড়াতে না পারেন বা কোনো হাত বা পায়ে হঠাৎ দুর্বলতা অনুভব করেন, তবে এটি স্ট্রোকের পূর্বাভাস হতে পারে।
  2. হঠাৎ কথা বলতে অসুবিধা: স্ট্রোকের সময় কথা বলার ক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে। কোনো ব্যক্তি হঠাৎ করে কথা বলতে না পারলে বা অস্পষ্টভাবে কথা বললে, এটি স্ট্রোকের সংকেত হতে পারে।
  3. দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: হঠাৎ করে এক বা দুই চোখে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস বা ঝাপসা হওয়া স্ট্রোকের আরেকটি লক্ষণ। এটি এমন এক সমস্যা যা অবিলম্বে নজর দিতে হবে।
  4. হঠাৎ বিভ্রান্তি বা অসংলগ্ন আচরণ: স্ট্রোকের ফলে হঠাৎ মস্তিষ্কে বিভ্রান্তি, স্মৃতি হারানো বা আচরণে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। হঠাৎ করে কোনো কাজের ধরণ পরিবর্তিত হলে বা চিন্তায় অসংলগ্নতা দেখা দিলে, এটি একটি বিপজ্জনক সংকেত।
  5. হঠাৎ মাথাব্যথা: কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই তীব্র মাথাব্যথা অনুভব করলে এটি হেমোরেজিক স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি মাথাব্যথার সাথে বমি, মাথা ঘোরা, বা অচেতনতার মতো উপসর্গ থাকে।

কখন চিকিৎসা গ্রহণ করবেন?

স্ট্রোকের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। “সময়ই জীবন” এই প্রবাদটি স্ট্রোকের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। প্রতিটি মিনিটে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা উচিত।

FAST পদ্ধতি: স্ট্রোকের লক্ষণ চিহ্নিত করার উপায়

“FAST” পদ্ধতিটি স্ট্রোকের লক্ষণগুলো সহজে চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মনে রাখা এবং সঠিক সময়ে ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • F (Face drooping): মুখের একপাশ কি ঝুলে পড়েছে?
  • A (Arm weakness): হাতের শক্তি কি কমে গেছে?
  • S (Speech difficulty): কথা বলতে কি সমস্যা হচ্ছে?
  • T (Time to call 999): যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো থাকে, তবে দ্রুত 999 বা স্থানীয় জরুরি নম্বরে ফোন করুন।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর উপায়

স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করতে কিছু জীবনধারা পরিবর্তন অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:

  1. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: উচ্চ ফাইবার, ফল, শাকসবজি এবং স্বল্প চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। লবণ এবং চিনি কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  2. নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করুন। হাঁটা, সাইক্লিং, অথবা জগিং ভালো বিকল্প।
  3. ধূমপান এবং অ্যালকোহল ত্যাগ: ধূমপান স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  4. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করে রাখুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন।
  5. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজনের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

স্ট্রোকের লক্ষণগুলো অবহেলা করা কখনোই উচিত নয়। সচেতনতা এবং দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে স্ট্রোকের মারাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। যদি আপনার বা আশেপাশের কারো স্ট্রোকের কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। জীবন রক্ষা করার জন্য সময়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সচেতন থাকুন এবং অন্যদেরও সচেতন করুন।

spot_img

Must Read

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here